অনলাইন ডেস্ক :
মিয়ানমার সীমান্তের এক হাজার ৬ শত ৪৩ কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। সীমান্তে আরও ভালো নজরদারির সুবিধার জন্য টহল পথও প্রশস্ত করা হবে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ তথ্য জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ভারত-মিয়ানমার সীমান্তের মধ্যে মণিপুরের মোরেহ অংশের ১০ কিলোমিটার এলাকায় ইতোমধ্যে বেড়া দেওয়া হয়েছে। এছাড়া হাইব্রিড সার্ভিল্যান্স সিস্টেমের (এইচএসএস) মাধ্যমে বেড়া দেওয়ার দুটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এ প্রকল্পের আওতায় অরুণাচল ও মণিপুরে এক কিলোমিটার করে বেড়া দেওয়া হবে। মণিপুরে প্রায় ২০ কিলোমিটারজুড়ে বেড়া নির্মাণের অনুমোদন পাওয়া হয়েছে। এ কাজ শিগগিরিই শুরু হবে।
তিনি লেখেন, মোদি সরকার দুর্ভেদ্য সীমান্ত নির্মাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সপ্তাহ খানেক আগেও অমিত শাহ ভারত-মিয়ানমারের সীমান্ত বন্ধ করার কথা বলেছিলেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সীমান্ত বেড়া দিয়ে সুরক্ষিত করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের যে অবাধ যাতায়াতের চুক্তি আছে, সেই চুক্তি ভারত সরকার পুনর্বিবেচনা করবে। দুই দেশের মধ্যে আসা-যাওয়ার এই ব্যবস্থা বন্ধ হতে চলেছে।
তিনি বলেন, ভারত সরকার ছয় বছরের পুরনো অবাধ চলাচলের চুক্তিও বাতিল করার কথা ভাববে। ওই চুক্তিতে দুই দেশের মানুষ অবাধে অন্য দেশের ভেতরে ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারতেন। ওই চুক্তি করা হয় কারণ, উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে মিয়ানমারের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের রক্তের এবং সামাজিক যোগাযোগ রয়েছে। চুক্তিটি নবায়ন করা হয় ২০১৬ সালে।
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাহাড়ি ভূখণ্ডে বেড়া তৈরি করা অসম্ভব। এটি চ্যালেঞ্জে পরিপূর্ণ হবে। এছাড়া ভারতের এই পরিকল্পনা সীমান্ত এলাকার জনগণের মাঝে কয়েক দশক ধরে বিদ্যমান ভারসাম্যকে অস্থিতিশীল করতে পারে। পাশাপাশি প্রতিবেশীদের সঙ্গে উত্তেজনা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হলো, উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বিরোধিতা। ভারত মিয়ানমারের সীমান্তের ৫২০ কিলোমিটার রয়েছে অরুণাচল প্রদেশে, নাগাল্যান্ডে রয়েছে ২১৫ কিলোমিটার, মণিপুরে ৩৯৮ এবং মিজোরামে ৫১০ কিলোমিটার। অতীতেও বিভিন্ন সময়ে এখানে সীমান্ত বন্ধের কাজ করার চেষ্টা হয়েছে।
তারপরও ভারত কেন তাদের সীমান্ত বন্ধ করতে চায়? এর প্রধানত কারণ হলো- ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়া ভারতের জন্য ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি তৈরি করেছে। জাতিসংঘের মতে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যুদ্ধে প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সম্প্রতি সেখানে জাতিগত বিদ্রোহীরা মিয়ানমারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ শহর চিন এবং পালেতওয়া দখল করেছে। সেখান থেকে ভারতে পালিয়ে আসার সুযোগ রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, মণিপুরে জাতিগত সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে মিয়ানমারের সঙ্গে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। মণিপুরে মেইতেই সম্প্রদায়ের সঙ্গে কুকি সম্প্রদায়ের জাতিগত সহিংসতা শুরু হওয়ার পরে এখন পর্যন্ত ১৭০ জনের বেশি প্রাণ গেছে এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিরেন সিং গত সেপ্টেম্বরে জানিয়েছিলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে অবাধ যাতায়াতের কারণে মণিপুরে জাতিগত হিংসা রোধ করা যাচ্ছে না। ভারত সরকারেরও একই রকম বক্তব্য ছিল।
গত জুলাইয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, ভারতের সীমান্ত এলাকাগুলো ‘ব্যাপকভাবে অশান্ত’। মানব পাচার ও মাদক পাচার রোধ করতে মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করা দরকার।
সম্প্রতি মিয়ানমারে সেনা সদস্যরা আরাকান আর্মির বিদ্রোহীদের ধাওয়া খেয়ে ভারতে পালিয়ে আসছেন। এ বিষয়টিও ভালো চেখে দেখছেন না ভারত। তাদেরকে আবার মিয়ানমারে ফেরত পাঠাচ্ছে ভারত।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-